প্রাচীন সঞ্চয় বনাম আধুনিক সঞ্চয় – ইশপের পিঁপড়া বনাম আধুনিক রোলস রয়েস।
ছোটবেলায় পড়া ইশপের সেই পিঁপড়ার গল্পটি তো সবারই মনে আছে। ঐ যে সারা গ্রীষ্ম ঋতুতে একটু একটু করে সঞ্চয় করে, পিঁপড়া সেই সঞ্চয় ব্যবহার করে শীত কালে যখন কোথাও কোন খাবার ছিল না।
আমাদের দেশের ক্ষুদ্র ঋণের ইতিহাস যদি আমরা একটু বিশ্লেষণ করি তাহলে আমরা দেখতে পারি যে আগের দিনের সঞ্চয়ের ধারণা অনেকটা সেই পিঁপড়ার সঞ্চয়ের মতই ছিল। এর কিছু কারণ আছে। তা হল, ঐ সময়ের মূল সদস্যরা ছিলেন অতি দরিদ্র বা যাকে আমরা বলে থাকি হতদরিদ্র। সেই সময় অনেকেই ব্যক্তিগত উদ্দ্যেগে এমনকি মুঠো হিসেবে চাল ও সঞ্চয় রাখতেন। যেই সঞ্চয় সেই সময়ের হত দরিদ্র মানুষদের সামান্য বিপদেও কাজে লাগত।
দিন বদলাচ্ছে এবং তা খুব দ্রুত বদলাচ্ছে। সেই সময়ের হত দরিদ্র মানুষের অনুপাত আজকের দিনে অনেক কমে যাচ্ছে। এমনকি সেই পিঁপড়ার সঞ্চয়ের মত সঞ্চয় আজকের দিনে শুধু যে বেমানান তাই নয় বরং একদিক দিয়ে আর্থিক প্রতিষ্ঠানের জন্য তা অসামঞ্জস্য বটে। কীভাবে তা একটা গল্পের মাধ্যমে বুঝানোর চেষ্টা করছি।
একজন খুব ধনী ব্যক্তি একবার ব্যাংক থেকে ৫০০০০ টাকা ধার নিলেন। ঐদিনই তিনি দেশের বাইরে যাবেন। তখন ব্যাংকের কর্মকর্তা তাকে বললেন যে স্যার, আপনাকে মর্টগেজ হিসেবে কিছু রেখে যেতে হবে। তিনি বললেন যে, আমি খুব জরুরি অবস্থায় আছি, ঠিক আছে আপনি আমার সাথে থাকা আমার রোলস রয়েস গাড়িটি রাখুন। ( রোলস রয়েস হল পৃথিবীর সবচাইতে দামী গাড়ির একটি, যার মুল্য প্রায় কোটি টাকা)। তো এটা মর্টগেজ রাখার পর ব্যাংকের লোকরা খুব হাসলেন যে সামান্য ৫০ হাজার টাকার জন্য এত দামী গাড়ি কেউ মর্টগেজ রাখে। ঐ ব্যক্তি যথারীতি ১০ দিন পর দেশে ফেরত এসে ৫২ হাজার টাকা দিয়ে তার গাড়ি নিয়ে গেলেন। ব্যাংকের কর্মকর্তা প্রশ্ন করলেন যে স্যার এত কম টাকার জন্য আপনি এত দামী গাড়ি রাখতে গেলেন কেন? লোকটি উত্তরে বললেন যে হুট করে আমার বাইরে যাবার দরকার ছিল, গাড়ি বাড়িতে রেখে যাবার উপায় ছিলনা। কোন সিকুরিটি কোম্পানির কাছে দিলে তারা দিন প্রতি ১০ হাজার চার্জ করত, সেই হিসেবে ১০ দিনে ১ লাখ। সেখানে আমি আপনাদের কাছে ২ হাজার টাকায় রাখতে পারলাম নিরাপদে সাথে ৫০ হাজার টাকার লোণ ও পেলাম!!!!
তো সেই পিঁপড়ার সঞ্চয়ের মত যেই সঞ্চয় আমরা এখন রাখছি সেটিকে আমরা এই গল্পের সাথে সুন্দর তুলনা করে দেখাতে পারি। সদস্যরা যারা খুব কম কম পরিমাণে সঞ্চয় রাখে এবং লোণ নেন না বললেই চলে, তারা মূলত এই সমিতির সিস্টেম টা ব্যবহার করছেন সেই ধনী ব্যক্তির মতো। কারণ তাদের এই সঞ্চয় দিতে খরচ করে ব্যাঙ্কে যাবার প্রয়োজন হয় না, মন চাইলে সঞ্চয় দেয় এবং তা যতটা না প্রয়োজনের তাগিদে বা কোন ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার অংশ হিসেবে তার চাইতে তা দেখা যায় নিজেদের উচ্ছিস্ট অংশ নিরাপদে রাখার জন্য। যে সামান্য টাকা তার জমা হয় তা সে উঠিয়ে ফেলে হয়তো বাসায় মেহমান আসবে বা ভাল মন্দ খেতে বা শপিঙের জন্য। মাঝখান দিয়ে তার এই টাকা জমা রাখার জন্য আমার কর্মীর সময় নষ্ট, কলমের কালি নষ্ট, পোস্টিং এর সময় , হিসাব সব কিছুই নষ্ট। এত কিছুর পরেও যারা একটি নির্দিষ্ট পরিকল্পনা করে সঞ্চয় জমা করেন তাদের কথা ঠিক আছে, হয়তো একটি ভাল পরিমাণ টাকা তারা জমা করেন যেই টাকা তাদেরও উপকারে লাগে এবং তা সংস্থা সমূহ তাদের বিভিন্ন কাজে লাগাতে পারে। কিন্তু যারা হয়তো প্রতি সপ্তাহে ২০-৩০ টাকা জমা দেন এবং তা ১০০০ হলেই উঠানোর জন্য পাগল হয়ে যান তারা মূলত এই সুন্দর সঞ্চয় সিস্টেমের সিস্টেম লস বা আপনারা তাকে বলতে পারেন ব্যাড ইফেক্টস। এতে করে না তার কোন লাভ হচ্ছে না সংস্থার। বরং সংস্থা তার জন্য যে সময় ও সম্পদ ব্যয় করছে তা পুরোটাই বাতিলের খাতায় পড়ে যায়।
আধুনিকতার এই রোলস রয়েসের যুগে যদি সেই পিঁপড়ার মত সঞ্চয় করতে থাকি আমরা তবে তা একদিক দিয়ে সদস্যর ক্ষতি এবং তা আধুনিক যুগের অন্য আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সাথে তাল মিলাতে না পেরে তা এই ক্ষুদ্র ঋণ প্রতিষ্ঠানের জন্য একটি সতর্কবার্তা।

মাহ্দী যুবায়ের
বিএসএস, এমএসএস, রাষ্ট্রবিজ্ঞান,
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
লেকচারার- পৌরনীতি ও সুশাসন- ইউনুছ খান মেমোরিয়াল কলেজ, শামুরবাড়ি,লৌহজং,মুন্সিগঞ্জ।

#মাইক্রোফাইস্যান্স বেসিক বিষয়গুলো জানতে ভিজিট করুন- https://learnmicrofinance.com/microfinance-basics/
#চাকুরী বিজ্ঞপ্তি পেতে ভিজিট করুন- https://learnmicrofinance.com/jobs/
অন্যান্য বিষয় জানতে ভিজিট করুন-
https://learnmicrofinance.com/blog/
*** আপনার লেখা ও অভিজ্ঞতা বিনিময়ের মাধ্যমে মাইক্রোফাইন্যান্স কার্যক্রম সঠিক দিক নির্দেশনা পাবে বলে মনে করি। ধন্যবাদ- www.learnmicrofinance.com